Image

chapter 2: সময়ের রহস্য – ঘড়ির কাঁটা -Story

ঘরটা কাঁপা থেমে যাওয়ার পর আরিফ কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইল। প্রথম অধ্যায়ে যে ঘটনার সূত্রপাত—ঘড়ির কাঁটা ২৩:৫৯-এ এসে থেমে যাওয়া এবং তারপর আকস্মিকভাবে ঘর কেঁপে ওঠা—সেটা এখনো তার মনের ভেতরে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগিয়ে রাখছে। কয়েক মুহূর্ত ধরে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। তারপর ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকাল সেই ঘড়িটার দিকে।

ঘড়ির কাঁচের ওপারে এখনো জ্বলজ্বল করছে ২৩:৫৯, কিন্তু কাঁটা আর নড়ছে না। যেন সময় এখানে এসে থেমে গেছে। ঘরের বাতাস ভারী হয়ে আছে, আরিফের মনে হলো এখানে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে, যা সময়কে আটকে রেখেছে অথবা সময়কে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করছে।

কিছুক্ষণ পর, বইয়ের স্তূপের মধ্যে আরিফ খুঁজে পেল সেই অদ্ভুত বই—“সময় ও অস্তিত্ব”—যেটা প্রথম অধ্যায়ে সে হাতে নিয়েছিল। বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোতে কিছু পরিচিত শব্দ, আবার কিছু সম্পূর্ণ অচেনা ভাষায় লেখা অক্ষর। মনে হলো, এই বইতে সময় সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আছে, যা সাধারণ মানুষ জানে না।

সময় কী?

বইটা খুলে ধীরে ধীরে পাতা ওল্টাতে লাগল আরিফ। এক জায়গায় বাংলায় কিছু বাক্য লেখা আছে—

“সময় এক রহস্যময় ধারা, যা কখনোই থেমে থাকে না। তবে যে চায়, সে এ ধারাকে বাঁকিয়ে দিতে পারে—নিজের চিন্তার মাধ্যমে। বাস্তবে সময় কেবলমাত্র একটি ধারণা, যার প্রকৃত অস্তিত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।”

এই লাইনগুলো পড়ে আরিফ কেমন যেন শিহরিত বোধ করল। এতদিন সময়কে সে কেবল ঘড়ির কাঁটায় মাপা একটি দৈনন্দিন বাস্তবতা বলে মনে করত। কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে, সময় নাকি মানুষের চিন্তার সাথেও জড়িত। সময়কে বাঁকিয়ে দেওয়া যায়—কীভাবে?

অন্য একটা পাতায় আবার অদ্ভুত কিছু চিহ্ন। বুঝতে পারা যাচ্ছে না, তবে মনে হচ্ছে যেন গণিতের সূত্র বা পদার্থবিজ্ঞানের সিম্বল। পাশে একটা বাক্য—

“যখন ঘড়ির কাঁটা থেমে যায়, সময় কি সত্যিই থেমে যায়, নাকি আমরা কেবল তার প্রবাহ দেখতে পাই না?”

ঘড়িটা যে এখন থেমে আছে, সেটাই কি এই বইয়ের ইঙ্গিত? আরিফ অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, ঘড়ির থেমে যাওয়ার অর্থ কী? ঘড়ির কাঁটা যদি না নড়ে, তাহলে কি সময় সত্যিই থেমে গেছে?

ঘড়ি ও সময়ের সম্পর্ক

আরিফ এবার ঘড়িটার কাছে এগিয়ে গেল। প্রাচীন ঘড়ি, হাতে ধরা যায়। কাচের নিচে দেখল, যন্ত্রাংশগুলো একধরনের অদ্ভুত স্থবিরতায় রয়েছে। একটু আগেই যেগুলো কাঁপছিল, এখন পুরোটাই নিস্তব্ধ।

সে বইটায় ফিরে তাকাল। আরেকটি পৃষ্ঠায় দেখা গেল, ঘড়ির নানা প্রকার চিত্র। কিছু ডিজিটাল, কিছু অ্যানালগ, কিছু আবার সম্পূর্ণ বিমূর্ত। বইয়ের নিচে একটা ক্যাপশন—

“ঘড়ি হলো মানুষের তৈরি সময়ের একক পরিমাপের যন্ত্র। কিন্তু সময় নিজেই মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে—তবু মানুষ চায় একে বশে আনতে।”

মনে হলো, এই ঘড়িটা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বরং ঘড়িটাই হয়তো সময়কে এখানে নিয়ন্ত্রণ করছে।

নিজের অস্তিত্বের প্রশ্ন

আরিফের মনে পড়ল, প্রথম অধ্যায়ে সে নিজেকে এই ঘরে আবিষ্কার করেছিল অজানা পরিস্থিতিতে। এখানে তার সময়ের হিসাব নেই, বাইরের আলো নেই, দিন-রাতের ধারাও বোঝা যায় না। তার কাছে কেবল একটা ঘড়ি আর কিছু বই। ঘড়িটাই তার সময় জানার একমাত্র উপায়, অথচ সেটাই বারবার অদ্ভুতভাবে থেমে যাচ্ছে বা পাল্টে যাচ্ছে।

হয়তো এই ঘরটাই একটা পরীক্ষাগার, যেখানে সময়ের স্বাভাবিক প্রবাহ বিকৃত হয়েছে। বইগুলো যেন সেই রহস্যের চাবিকাঠি। বিশেষ করে “সময় ও অস্তিত্ব” নামের বইটি, যা তাকে সময়ের প্রকৃতি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে।

আরিফ বইয়ের শেষের দিকের একটা পৃষ্ঠা খুলল। সেখানে কিছু লাল কালিতে লেখা, কিছু জায়গায় দাগ কাটা—

“যদি তুমি সময়কে বুঝতে চাও, তবে তোমাকে বুঝতে হবে নিজের অস্তিত্ব। কারণ তুমি নিজেই সময়ের ভেতরে বাস করো, আবার তোমার চিন্তাই সময়কে সৃষ্টি করে। এই ঘড়ি একদিন তোমাকে সত্যের সামনে দাঁড় করাবে।”

এই লাইনগুলো পড়ে আরিফের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো। সত্যের সামনে দাঁড় করাবে মানে কী? ঘড়িটা কি আসলে কোনো সংকেত দিচ্ছে, নাকি এই ঘরেই লুকিয়ে আছে তার জীবনের উত্তর?

দ্বন্দ্ব ও অস্বস্তি

হঠাৎ আবার সেই টিকটিক শব্দ শুরু হলো—খুব ধীরে, কিন্তু স্থির নয়। সময় যেন একটা ঢেউয়ের মতো আগাচ্ছে। আরিফ ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল, এবার ২৩:৫৯ থেকে ০০:০০-তে বদলে গেছে। কিন্তু এটা কি পরবর্তী দিনের সূচনা, নাকি অন্য কোনো মাত্রার সময়?

ঘরটায় যেন হালকা একটা ঝাঁকুনি অনুভূত হলো। মেঝে সামান্য কেঁপে উঠল। চারপাশের বইগুলো একটু নড়ে উঠল। আরিফ দৌড়ে গিয়ে ঘড়িটা হাতে নিল। মনে হলো, ঘড়িটার কাঁচের নিচে একটা নতুন লেখা ফুটে উঠছে।

“সময় কখনো থেমে থাকে না, কিন্তু তোমার জন্য সে অপেক্ষা করছে। তুমি কি প্রস্তুত?”

আরিফ ধীরে ধীরে পেছনে সরে গেল। শ্বাস ভারী হয়ে আসছে। এখন কি কিছু ঘটতে চলেছে?

সমাপ্তি (চলবে…)

বইটা আবার বন্ধ করে আরিফ টেবিলের ওপর রাখল। বাইরের জগৎ অদৃশ্য, ঘরের দরজা বন্ধ, অথচ মনে হচ্ছে ঘরের ভেতরেই সময় ও বাস্তবতার সব রহস্য আটকে আছে। এই ঘড়ি, এই বইগুলো, আর তার নিজের অস্তিত্ব—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত রহস্যের বৃত্ত তৈরি হয়েছে।

সে মনে মনে ভাবল, “আমি কি সত্যিই সময়কে বুঝতে পারব? নাকি সময়ই আমাকে নিয়ে খেলছে?”

এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে, তাকে আরো খুঁজে দেখতে হবে—সময় ও অস্তিত্বের এই গোপন জগৎ।


(চলবে…)

লেখকের নোট:
এই অধ্যায়ে সময়ের প্রকৃতি এবং ঘড়ির অদ্ভুত আচরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে যে ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয়েছিল—ঘড়ির থেমে যাওয়া, ২৩:৫৯ থেকে অদ্ভুত রকমের পরিবর্তন—এখন তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। পরবর্তী অধ্যায়ে এই রহস্য আরও গভীর হবে।


Weekly Popular