অধ্যায় ১০: শেষ প্রতিফলন
জামান সাহেব ধীরে ধীরে তার পুরনো জীবনের চক্র থেকে বেরিয়ে আসছিলেন, কিন্তু তার মন এক অদ্ভুত ভারে আচ্ছন্ন ছিল। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তাকে এমন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যার উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন, সময় তার হাত থেকে বয়ে গেছে বালির মতো।
এক সন্ধ্যায়, বারান্দায় বসে তিনি সেই পুরনো ছবি অ্যালবামটি খুললেন। ছবিগুলোতে ফুটে উঠেছে তার কর্মময় জীবন, পরিবার, সন্তানদের শৈশব, কলেজের বন্ধুদের সাথে তোলা কিছু ছবি। একেকটি ছবি যেন একেকটি গল্প বলে চলেছে, কিন্তু জামান সাহেবের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—“আমি কি সত্যিই জীবনকে উপভোগ করেছি? আমি কি পরকালের জন্য প্রস্তুত?”
অপ্রত্যাশিত চিঠি
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। জামান সাহেব ধীর পায়ে উঠে দরজা খুললেন। একজন অচেনা কুরিয়ার ডেলিভারিম্যান দাঁড়িয়ে।
“জামান আহমেদ সাহেব?”
“জি, বলুন।”
“আপনার জন্য একটি চিঠি এসেছে।”
চিঠির প্রেরকের নাম লেখা নেই। জামান সাহেব ধীরে ধীরে খামটি খুললেন। ভিতরে একটি ছোট্ট কাগজ—‘তুমি কি জানো, সময় কোথায় চলে যায়?’
চিঠির এই বাক্যটি যেন তার মনের গভীরে একটি ঢেউ তোলে। এটা কে পাঠাতে পারে? তিনি কোনো কুল-কিনারা করতে পারলেন না, কিন্তু মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করতে লাগল।
পরকাল ও জীবনপথের হিসাব
সেই রাতে ঘুম ভাঙার আগ মুহূর্তে তিনি নিজেকে এক অন্যরকম জায়গায় দেখলেন।
চারিদিক ঝাপসা, একধরনের আলো-অন্ধকারের খেলা চলছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক অপরিচিত লোক, যার চোখের দৃষ্টিতে এক গভীরতা রয়েছে।
“তুমি কে?” জামান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
লোকটি হাসল, “আমি তোমার আমলনামা নিয়ে এসেছি। তুমি কি জানো, তুমি কেমন জীবন কাটিয়েছ?”
এরপর এক নিমিষেই চারপাশের দৃশ্য বদলে গেল। তিনি দেখলেন তার ছোটবেলার দিনগুলো, মা-বাবার ভালোবাসা, বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়। একটু পরে দৃশ্য বদলে গেল—তিনি দেখলেন নিজের কর্মজীবন, সকাল-সন্ধ্যার ক্লান্তিকর রুটিন, অফিসের চাপে হারিয়ে যাওয়া সময়গুলো।
তারপর তিনি দেখলেন ভবিষ্যতের এক দৃশ্য—একটি কবরে শুয়ে থাকা শরীর, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি রহস্যময় সৃষ্টি, যাদের মুখ অন্ধকারে ঢাকা।
“এটা কি?”
“তুমি মৃত্যুর পর কোথায় থাকবে, সেটার জন্য প্রস্তুত তো?”
তিনি দেখলেন কবরের ভিতরে নিজেকে, একা, নিঃসঙ্গ, চারদিকে ঘোর অন্ধকার। হঠাৎ দূর থেকে একটি কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “তুমি কি জানো, তোমার সময় ফুরিয়ে এসেছে?”
তিনি বুঝতে পারলেন, এই স্বপ্ন নয়—এটা একটা ইশারা, একটা উপলব্ধি।
সমাপ্তির শুরু
ঘুম ভাঙতেই জামান সাহেব বুঝতে পারলেন, সময় তার হাতে আর বেশিদিন নেই। তিনি জানেন না, এই স্বপ্ন সত্যি ছিল কিনা, কিন্তু এটি তাকে বদলে দিয়েছে।
তিনি লিস্টের শেষ দিকটা দেখলেন। সেখানে লেখা—“পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।”
এবার তিনি সত্যিই সেটা করতে চাইলেন।
তিনি বেশি সময় পরিবার ও প্রার্থনায় কাটানো শুরু করলেন। যারা কষ্ট পেয়েছে তাদের কাছে ক্ষমা চাইলেন, দান-সদকা করতে লাগলেন, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—তিনি এই ছোট জীবনের পরে যে সত্যিকারের জীবন আছে, সেটার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন।
সেদিন রাতে, শান্ত মনে তিনি শেষবারের মতো আকাশের তারা দেখলেন। মনে হলো, এবার তিনি সত্যিই জীবনের অর্থ বুঝেছেন।
— শেষ।








