Image

একটা পড়ন্ত বিকাল -পর্ব ৮


অষ্টম অধ্যায়: অদৃশ্য ছায়ার অনুসরণ

সকাল বেলা গ্রামের আকাশ ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। চারদিকে একটা অদ্ভুত নীরবতা, যেন প্রকৃতি নিজেই কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। জামান সাহেব ঘুম থেকে উঠে জানালার বাইরে তাকালেন। তিনি অনুভব করলেন, আজকের সকালটা অন্যরকম। মনে হচ্ছিল, কেউ যেন তাকে দূর থেকে লক্ষ্য করছে।

তিনি ধীরে ধীরে বারান্দায় এসে বসলেন। অদ্ভুত এক অস্বস্তি তার মনে বাসা বাঁধছে। কয়েকদিন ধরে এমন অনুভূতি হচ্ছে, কিন্তু আজ সেটা আরও তীব্র। গত রাতে তিনি এক স্বপ্ন দেখেছিলেন—একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি তার দিকে এগিয়ে আসছে, কিন্তু কাছে আসার আগেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।

সকালটা বেশ অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। বাড়ির সবাই স্বাভাবিক আচরণ করলেও জামান সাহেবের মনে হচ্ছিল, কিছু একটা ঠিক নেই। নাস্তার টেবিলে বসে তিনি ছেলেদের দিকে তাকালেন।

“তোমাদের কি কিছু অদ্ভুত লাগছে আজ?”

ছোট ছেলে নাদিম হেসে বলল, “কেন বাবা? সব কিছু তো ঠিকই আছে!”

কিন্তু বড় ছেলে সজল একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “আসলে বাবা, আমিও কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি, আপনার মনটা বড্ড বিক্ষিপ্ত। ঠিক আছে তো?”

জামান সাহেব চুপ করে গেলেন। সত্যিই কি তিনি মাত্রাতিরিক্ত ভাবছেন? নাকি কিছু একটা ঘটতে চলেছে?

নাস্তা শেষ করেই তিনি হাঁটতে বের হলেন। রাস্তার ধারে কয়েকজন গ্রামের মানুষ দাঁড়িয়ে কিসের যেন আলোচনা করছিল। তার চোখ পড়ল বৃদ্ধ মকবুল চাচার দিকে। মকবুল চাচা ছিলেন গ্রামের সবচেয়ে পুরনো মানুষদের একজন। তার চোখে আজ একটা অদ্ভুত আতঙ্ক।

“চাচা, কী হয়েছে?”

মকবুল চাচা ধীরে ধীরে বললেন, “জামান মিয়া, তুমি গতরাতে কোনো স্বপ্ন দেখছো?”

প্রশ্ন শুনে জামান সাহেব একটু চমকে গেলেন। “হ্যাঁ, কিন্তু চাচা, আপনি এটা জানলেন কীভাবে?”

মকবুল চাচা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি, জামান মিয়া। আর জানো, আমার বাবা বলতেন, যখন একই স্বপ্ন দু’জন মানুষ একসঙ্গে দেখে, তখন কিছু একটা ঘটতে বাধ্য।”

একটা ঠান্ডা স্রোত জামান সাহেবের শরীর বেয়ে নেমে গেল। তার মনের অস্থিরতা আরও বেড়ে গেল।

তিনি ধীরে ধীরে রাস্তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেন। হঠাৎ মনে হলো, কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে। তিনি দ্রুত পেছনে তাকালেন। কিন্তু কিছুই নেই।

তারপরও অস্বস্তি কাটছিল না। কিছুক্ষণ পর তিনি গ্রামের পুরনো মন্দিরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পেলেন।

ফিসফিস করে কেউ যেন বলছে, “ফিরে যাও… সময় নেই…”

শব্দটা এতটাই ক্ষীণ ছিল যে তিনি ঠিক বুঝতে পারলেন না, মনের ভুল নাকি সত্যি কিছু শুনেছেন।

হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেল। চারপাশের গাছের পাতাগুলো কাঁপতে লাগল। কিছুক্ষণ পরেই বাতাস শান্ত হয়ে গেল, কিন্তু জামান সাহেবের বুকের ধুকপুকানি যেন থামছিল না।

তিনি দ্রুত পা চালালেন, কিন্তু কয়েক কদম এগোতেই একটা কালো ছায়া রাস্তার ধারে দেখতে পেলেন। ছায়াটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

তার পা হঠাৎ থেমে গেল। শ্বাস ভারী হয়ে এলো।

ছায়াটা ধীরে ধীরে মিশে গেল কুয়াশার মধ্যে।

এটা কি তার মনের ভুল? নাকি সত্যিই কেউ আছে?

হঠাৎ মকবুল চাচার কথা মনে পড়ল—“যখন একই স্বপ্ন দু’জন মানুষ দেখে, তখন কিছু একটা ঘটতে বাধ্য…”

ঘটনাগুলো কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু জামান সাহেবের মনে হলো, কিছু একটা ঠিক নেই। সময় যেন তার হাতের মুঠোয় ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে…


পরবর্তী অধ্যায়ে কি ঘটবে?

জামান সাহেব কি এই রহস্যময় ছায়ার অর্থ বুঝতে পারবেন? নাকি তার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য ধরা দিতে চলেছে?


Weekly Popular