Image

একটা পড়ন্ত বিকাল – পর্ব ৪

চতুর্থ অধ্যায়: আত্মজিজ্ঞাসার সন্ধিক্ষণ

জামান সাহেবের জীবন যেন এখন এক নতুন মোড়ের সন্ধিক্ষণে। আমিনুলের সাথে সাক্ষাতের সেই মধুর মুহূর্তগুলো তার মনে আজও গভীরভাবে গেঁথে আছে। সেই দিনের স্মৃতিচারণ তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে—বন্ধুত্বের মূল্য, জীবনের ছোট ছোট আনন্দের গুরুত্ব। কিন্তু তার হৃদয়ের গভীরে একটি চিন্তা ক্রমাগত তাকে অস্থির করে তুলছিল।

সকালের মিষ্টি আলো জানালার পর্দা ছুঁয়ে ঘরের ভেতর এসে পড়ল। জামান সাহেব উঠে বারান্দায় এলেন। আজকের সকালটা যেন অন্যরকম। আকাশটা সোনালি আলোয় ঝলমল করছে, আর গাছের পাতা নরম বাতাসে দুলছে।

তিনি চেয়ারে বসে নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। এত বছরের কর্মজীবন, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন, সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা—সব কিছুই করেছেন, কিন্তু নিজের জন্য কী করেছেন? তার সেই পুরনো লিস্টটা যেন বারবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

“আমি কি সত্যিই বেঁচে আছি, নাকি কেবল একটা যান্ত্রিক জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি?” তিনি মনে মনে প্রশ্ন করলেন।

এমন সময় তার ছোট ছেলে জিয়াদ বারান্দায় এল। “বাবা, চা খাবেন?”

“হ্যাঁ, এনে দে,” তিনি হালকা হাসলেন।

চা হাতে নিয়ে জিয়াদ বলল, “বাবা, কাল রাতে আপনি অনেকক্ষণ লিখছিলেন। কী লিখছিলেন?”

“লিস্টটা নিয়ে কাজ করছিলাম। জীবনে যা করতে চাই, সেগুলো মনে করে লিখে রেখেছিলাম।”

জিয়াদ মৃদু হেসে বলল, “বাবা, আপনার লিস্টটা আমাকে দেখাবেন? আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই।”

জামান সাহেব ছেলেকে দেখে মনে মনে খুশি হলেন। “ঠিক আছে, সন্ধ্যায় আমি তোকে দেখাব। কিন্তু আগে আমাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

দুপুরে খাবার পর তিনি তার ঘরে গিয়ে পুরনো ডায়েরিটা খুললেন। লিস্টের কাজগুলো একে একে পড়তে লাগলেন। বন্ধুদের সাথে দেখা করা, গ্রামে গিয়ে থাকা, প্রতি সপ্তাহে ঘুরতে যাওয়া—সব কিছুই যেন তাকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়।

সন্ধ্যার পর জিয়াদ এসে বলল, “বাবা, আপনি যদি চান, আমরা পরের সপ্তাহে গ্রামে যেতে পারি। আপনি তো অনেকদিন যাবেন বলছেন, কিন্তু যাওয়া হয়নি।”

“সত্যি? তুই সময় বের করতে পারবি?” জামান সাহেব অবাক হলেন।

“অবশ্যই পারব, বাবা। আপনার জন্য আমি সব সময় বের করতে পারি,” জিয়াদ মৃদু হেসে বলল।

পরের সপ্তাহের জন্য তারা গ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। জামান সাহেবের মনে হলো, এবার সত্যিই তিনি তার জীবনটাকে নতুনভাবে শুরু করতে পারবেন।

রাতে ঘুমানোর আগে তিনি মনে মনে বললেন, “জীবন কখনো থেমে থাকে না। সময় যতই কেটে যাক, আমরা যদি নিজেদের ভালো লাগাগুলোকে ধরে রাখতে পারি, তাহলে জীবনটা সবসময় নতুন হয়ে ওঠে।”

তিনি লিস্টটা আবার খুলে দেখলেন এবং প্রতিজ্ঞা করলেন, এইবার সত্যিই তিনি তার স্বপ্নগুলো পূরণ করবেন। ধীরে ধীরে ঘুমের কোলে ঢলে পড়লেন, কিন্তু তার মনে ছিল নতুন দিনের আশার আলো।

(চলবে…)

Weekly Popular