Image

একটা পড়ন্ত বিকাল – পর্ব ৩

তৃতীয় অধ্যায়: পুরনো বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ

দিনগুলো দ্রুতই কেটে যাচ্ছিল। জামান সাহেব আবার কাজে ফিরে গেছেন, সেই আগের মতন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাজের ব্যস্ততার মাঝেই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার স্কুলের পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে হবে। বহুদিন ধরে যেটা ভেবে রেখেছিলেন, এবার সেটাই করবেন।

একদিন অফিস থেকে ফিরে তিনি পুরনো একটা ফোনবুক খুঁজে বের করলেন। সেখানে তার স্কুলের বন্ধু আমিনুলের ফোন নম্বর খুঁজে পেলেন। আমিনুল ছিল তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কিন্তু বহু বছর ধরে যোগাযোগ নেই। ফোন নম্বরটা দেখে তিনি একটু দ্বিধায় পড়লেন, এত বছর পরে কি আমিনুল তাকে মনে করবে?

ফোনটা করলেন। কয়েকবার রিং হওয়ার পরে ওপাশ থেকে একটা চেনা কন্ঠস্বর শোনা গেল, “হ্যালো?”

“হ্যালো, আমি জামান বলছি। জামান আহমেদ। চিনতে পারছিস?”

অন্যপাশ থেকে কিছুক্ষণ নীরবতার পর উত্তেজিত কন্ঠে আমিনুল বলল, “জামান! তুই? এত বছর পরে তোর ফোন! কেমন আছিস রে?”

জামান সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠল। “ভালো আছি রে। তোর কথা খুব মনে পড়ছিল। কেমন আছিস তুই?”

“আমি ভালো আছি। তোকে অনেক মনে পড়ত রে। তোকে ফোন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে হয়ে ওঠেনি। তুই কেমন আছিস?”

“আমি ভালো। আচ্ছা, কবে দেখা করা যায়? অনেক কথা আছে তোর সাথে।”

আমিনুল উত্তেজিত কন্ঠে বলল, “নিশ্চয়ই, অবশ্যই দেখা করব। চল, আগামী শুক্রবার বিকেলে আমার বাসায় আয়। আমরা বসে গল্প করব।”

নির্দিষ্ট দিনে, জামান সাহেব নির্ধারিত সময়ে আমিনুলের বাসায় পৌঁছালেন। বহুদিন পর দুই বন্ধুর দেখা। একে অপরকে দেখে দুইজনই আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলেন।

“আস, জামান! তুই কেমন আছিস?” আমিনুল উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল।

দুই বন্ধু বসলেন, চায়ের কাপ হাতে নিয়ে পুরনো দিনের কথা শুরু করলেন। স্কুলের দিনগুলো, দুষ্টামি, একসাথে পড়াশোনা, শিক্ষকদের কথা—সব কিছুই মনে পড়ল। যেন ফিরে গেলেন সেই সময়ের মাঝে।

“তুই জানিস, আমি এখনো সেই পুরনো স্কুলের পাশ দিয়ে গেলে আমাদের ক্লাসরুমটা দেখি। সব কিছু কত বদলে গেছে, তাই না?” আমিনুল আবেগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।

“হ্যাঁ রে, সব কিছুই বদলে গেছে। কিন্তু তোর সাথে এই মিলনটা, এই অনুভূতিটা ঠিক আগের মতনই আছে।” জামান সাহেবের চোখে জল এসে গেল।

“তুই কি এখনো গান গাস? তোর গলা কিন্তু দারুণ ছিল,” আমিনুল হেসে বলল।

“না রে, এখন আর তেমন গাওয়া হয় না। তুই তো জানিস, জীবন কত ব্যস্ত হয়ে গেছে,” জামান সাহেব একটু বিষণ্ন হয়ে বললেন।

দুই বন্ধু অনেকক্ষণ ধরে গল্প করলেন। পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করে দুজনেই যেন কিছুটা তরুণ হয়ে উঠলেন।

জামান সাহেব মনে মনে ভাবলেন, এতদিন ধরে যে অভাবটা অনুভব করছিলেন, আজ তা অনেকটা পূরণ হয়েছে। বন্ধুত্বের এই মিষ্টি সম্পর্কটাকে তিনি আর কখনো হারাতে দেবেন না। জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও এই সম্পর্কগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করবেন।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে তিনি বিদায় নিলেন। আমিনুল বলল, “জামান, আবার দেখা হবে। এবার কিন্তু আর এতদিন অপেক্ষা করব না।”

“অবশ্যই, আবার দেখা হবে। ভালো থাকিস, আমিনুল।” জামান সাহেব বিদায় জানিয়ে রওনা দিলেন।

ফিরে আসার পথে তিনি অনুভব করলেন, জীবনের এই ছোট ছোট আনন্দগুলোই আসলে সবচেয়ে বড়। বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, স্মৃতিচারণ—এগুলিই তো জীবনের প্রকৃত সম্পদ। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন, এবার সত্যিই তিনি তার লিস্টের কাজগুলো একে একে পূরণ করবেন।

বাসায় ফিরে তিনি লিস্টটা আবার খুললেন। একে একে সব কাজগুলো মনে মনে চিহ্নিত করলেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকেই তিনি এবার উপভোগ করবেন, সবকিছুকে নতুন করে দেখবেন। এবং সবকিছুর মধ্যেই খুঁজে নেবেন জীবনের আসল আনন্দ।

Weekly Popular